ফেনীর সোনাগাজীতে এতিমের সম্পত্তি দখলের চেষ্টাসহ ভাংচুর, লুটপাট ও হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার আদালতে একটি মামলা দায়ের করলেও সেটি প্রত্যাহার করতে প্রাণনাশের হুমকি ধামকি দিচ্ছে বলে জানায় অসহায় পরিবারটি। এ ব্যপারে ২০ নভেম্বর ভুক্তভোগীরা সোনাগাজী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।
ঘটনায় মামলার বাদি ও ভুক্তভোগী জান্নাতুল নাঈম জানান, সোনাগাজী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড চরগণেশ এলাকার সুরু মিঞার বাড়ীর তার বাবা মোশারফ হোসেন ১৯৯২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। বাবার মৃত্যুর পর জান্নাতুল নাঈমরা কোনভাবে কষ্ট করে দিন যাপন করেন। বর্তমানে মা ও তিন বোন ছাড়া তাদের কোন ভাই নেই। এদেরমধ্যে বড় বোন শামীমা আক্তার মা’য়ের সাথে বাড়ীতে থাকেন এবং বাকী দু’বোন স্বামীর বাড়ীতে অন্যস্থানে থাকে। এমন অবস্থায় পিতা জীবিত না থাকায় সম্পত্তির উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে আপন চাচা মোয়াজ্জেম হোসেন, চাচাত ভাই নুর নবী প্রকাশ কামরুল, ফুফাতো ভাই হোসেইন খান সহ তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী আবদুল আল মামুন ও মো: শরিফের। তাদের কাছে কোন দালালীক প্রমাণ ছাড়াই তারা দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়ভাবে জোর জুলুম করে সম্পত্তি ভোগ করে আসছিলো। কিন্তু জান্নাতুল নাঈমের পরিবারে কোন পুরুষ কর্তা না থাকায় কেউ তাদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়নি।
একপর্যায় গত ৮ নভেম্বর সকালে ভুমিদস্যু আবদুল আল মামুনের নেতৃত্বে তার ভাই শরীফ, চাচা মোয়াজ্জেম হোসেন, চাচাত ও ফুফাতো ভাই সহ বহিরাগত অন্তত ৭-৮ জন অজ্ঞাত লোকজন তাদের ৮৩ নং চরগণেশ মৌজার বিএস ২ হাজার ৬৪ নং খতিয়ানের ৩০২৪ নং দাগের ১৫ শতাংশ জায়গাতে বালু ও ফিলার গেড়ে জমি দখলে নেয়ার চেষ্টা করে।
পরে খবর পেয়ে সকালে বোন জান্নাতুল নাঈম ও সাজেদা আক্তার বাড়ীতে ফিরে অন্যায়ভাবে জমি দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে ভুমিদস্যু আবদুল আল মামুনসহ উল্লেখিত সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে দুপুর দেড়টার দিকে দা, কিরিছসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাড়ীতে হামলা চালায় এবং দরজা ভেঙ্গে বসত ঘরে ঢুকে জান্নাতুল নাঈমকে যৌন হয়রানী করে। একপর্যায় সন্ত্রাসী মামুন দা দিয়ে তার মাথায় আঘাত করলে তিনি ডান হাতের বাহুতে কাটা জখম পেয়ে মারাত্মক আহত হন। এসময় সন্ত্রসীরা তার কোলে থাকা ৮ মাসের বাচ্চাকে ছুড়ে খাটের উপর ফেলে দেয় এবং তার গলায় থাকা ১ ভরি ওজনের চেইণ (যার মূল্য ৬৮ হাজার টাকা) ও ২৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোবাইল সেট নিয়ে যায়।
এক পর্যায় বড় বোন শামীমা আক্তার এগিয়ে এলে তাকেও এলোপাতাড়ি কিল গুশি ও লাথি মেরে তার হাতে থাকা আনুমানিক (২২ হাজার টাকা) মূল্যের মোবাইল সেটটি ও গলায় থাকা ১ভরি ওজনের চেইণ নিয়ে যায়। পরে মা আনোয়ারা বেগম ও বড় বোনের মেয়ে সাদিয়া তাবাচ্ছুম এলিনা শৌরচিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে আসলে তাদেরও মারধর সহ নির্যাতন চালায় সন্ত্রসীরা। এসময় ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর চালায় এবং স্টীলের একটি আলমারী থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকাসহ দলীল দস্তাবেদ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা বিষয়টি কাউকে না জানাতে এবং এ নিয়ে মামলা করলে প্রাণনাশের হুমকি দেয় বলে জানান তিনি।
পরে ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে। কিন্তু সন্ত্রাসীদের ভয়ে আহতরা স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না যেতে পেরে ফেনী সদর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। ঘটনায় ১৫ নভেম্বর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে জান্নাতুল নাঈম একটি মামলা দায়ের করেন। পরে আদালত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনা তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন। কিন্তু মামলা দায়েরের খবরে সন্ত্রাসীরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে বেপরোয়া হয়ে নানাভাবে তাদের প্রাণনাশের হুমকি ধামকি দিলে ২০ নভেম্বর মা আনোয়ারা বেগম জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।
এ ব্যপারে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, প্রাণ রক্ষা চেয়ে আনোয়ারা বেগম একটি জিডি করেছেন। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখছে পুলিশ।